চলো আজ একটা গল্প শোনাই তোমাদের। এক অদম্য সাহসী পুরুষের গল্প।
তখন ইংরেজদের শাসন চলছে আমাদের দেশে। তাদের ভারি দাপট। তাঁরা নিজেদের আমাদের প্রভু ভাবতেন সবসময়। আমাদের নিজেদের দেশেই আমরা পরাধীন। সমস্ত অধিকার থেকে আমরা বঞ্চিত। আমি যে সময়কার কথা বলছি সে সময় ভারতীয়দের রেলের ফার্স্ট ক্লাস কামরায় চড়া বারণ ছিল কারণ ওটা শাসক শ্রেণী ইংরাজদের জন্য বরাদ্দ ছিল। ইংরাজরা ভারতীয়দের নেটিভ বলে ডাকত এবং ঘৃণার চোখে দেখত। ফলতঃ ওদের সাথে এক কামরায় যাওয়া আসা করা প্রভুদের কাছে ভারি অপমানকর ছিল।
এরকম একসময় এক ইংরাজ প্রভু একবার রেল সফরের সময় আবিস্কার করলেন যে তাঁর সহযাত্রীটি নেটিভ। কামরায় কেবল দুটিমাত্র প্রাণি। ইংরেজটি মুখ ঘুরিয়ে বসে থাকলেন। একসময় তার সহযাত্রীটি বাথরুম থেকে ফিরে এসে আবিস্কার করিলেন যে তার কিছুক্ষন আগে খুলে রাখা কোটটি উধাও। তিনি তখন বুঝলেন যে এটি কার কাজ। তাই চুপ করে রইলেন। ইংরেজরা নেটিভদের কি চোখে দেখে সেটি তাঁর অজানা ছিল না।
কিছুক্ষন পরে ইংরেজ প্রভুটি বাথরুম থেকে ফিরে দেখলেন যে তাঁর জুতজোড়াটি যথাস্থানে নেই। তিনি তো দেখেই চেঁচামিচি জুড়লেন। কিন্তু দেখলেন যে তাঁর সহযাত্রীটি নির্লিপ্ত মুখে বসে আছেন। তিনি রেগে গিয়ে তখন তাঁকে শুধলেন,
" টুমি কি আমার জুতাজোড়া দেখিয়াছ?"
তত্খনাৎ ওঁর সহযাত্রী টি উত্তর করলেন--
" সাহেব তোমার জুতোজোড়া আমার কোটটি আনিতে গিয়াছে।"
সাহেব বুঝিলেন যে নেটিভ পুরুষ টি তাঁর কোটটা টা ফেলে দেওয়ার খুব সুকৌশলে বদলা নিয়েছে। কিন্তু প্রচন্ড রাগ হওয়া সত্তেও তিনি এরপর আর কিছুই করতে পারলেন না। কোনো কথাও ওঁর মুখ দিয়ে আর বার হল না।
সেদিনের সেই তেজস্বী পুরুষটির নাম ছিল স্যর আশুতোষ মুখোপাধ্যায় যিনি বাংলার বাঘ নামে বেশী পরিচিত ছিলেন। ডাক্টর শ্যামা প্রসাদ মুখোপাধ্যায় এঁরই সুযোগ্য পুত্র ছিলেন।
স্যার আশুতোষ দীর্ঘদিন ধরে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। তিনি প্রথম ব্যক্তি যিনি এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডবল এমএসসি ( অঙ্ক ও পদার্থ বিদ্যায়) পাস করেন।
আজ এই বিখ্যাত ব্যক্তিটির জন্মদিন। তাঁর জন্মদিনে তাঁকে জানাই আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম!
Comments
Appreciate the author by telling what you feel about the post 💓
No comments yet.
Be the first to express what you feel 🥰.
Please Login or Create a free account to comment.