"মা, মা, কোথায় গেলেন আপনি?"
" এই তো বাবা রাম তুমি এসে গেছ?"
বলিয়া রামের জননি তখন চোখ মুছে সহাসে সামনে এসে দাঁড়ালেন। পুত্রশোকে একেবারে ভাঙ্গিয়া পড়িয়াছিলেন তিনি। ছোট পুত্র কে সম্মুখে দেখিয়া তিনি কিঞ্চিত খুশি হইয়াছিলেন। কিন্তু তাঁহার এই খুশি বেশিক্ষন স্থায়িত্ব পাইল না।
পুত্রের পরের প্রশ্ন তাঁকে আবার বিচলিত করিয়া দিল। " মা, বৌদিদির কি হয়েচে? জিগাসা করলুম যে কেমন আছেন তিনি। কোনো উত্তর ই দিলেন না। হাব-ভাবে মনে হল না যি তিনি আমাকে চিন্তে পেরেচেন!"
রামের জননী এই মুহুর্তে এইসব কথা ভাল লাগিতেছিল না। তিনি তারাতারি অন্য কথা পাড়িলেন। ব্যস্ত হইয়া পুত্র কে কহিলেন,
" বাবা, তুমি এত দুর থেকে এসেছ। আগে হাতমুখ ধুয়ে জল-টল কিছু খাও। বৌদিদির কথা পরে শুন না হয়।" কিন্তু তাহার পুত্র এত সহজে দমিবার পাত্র ছিলেন না। তিনি তত্ক্ষণাৎ পরের প্রশ্ন দাগিয়া বসিলেন।
" মা, বৌদিদিকে এমন কণের সাজে কেন সাজানো হচ্চে। দাদা চলে যাওয়ার পর তিনি তো এখন বিধবা। তাঁর তো এখন আপনার মত সাদা থান পরার কথা। মাতা এইবার কঠোর সুরে পুত্র কে কহিলেন--
" রাম তোমার এইসবে থেকে কোন কাজ নেই। তুমি কাছাড়ি ঘরে যাও আর নায়েবমশাই এর থেকে হিসাব -কিতাব বুঝে নাও। এখন থেকে তোমাকে ওইগুলো দেখতে হবে। " "
কিন্তু বৌদিদি?"
" বৌদিদি কে সতি হতে হবে। সমাজের এই বিধান যে পতির মৃত্যুর পর তার সহধর্মিনি কে সহগামিনি হতে হয়।"
" কিন্তু বাবার মৃত্যুর পরে আপনি তো তা হননি। আমি দাদাকে হারিয়েছি। বৌদিদিকে এত তারাতারি হারাতে চাইনা।" মাতার মুখের উপর অমন কঠোর বাক্য উচ্চারণ করিয়া রাম সেদিন মাতার কক্ষ হইতে বাহির হইয়া আসিয়াছিলেন।
কিন্তূ তাঁর অত্যন্ত দুর্ভাগ্য যে অনেক চেষ্টা করিয়াও সেইদিন তিনি তাঁর আদরের বৌদিদি কে বাঁচাইতে পারেন নাই। তাঁকে পত্নিধর্ম রক্ষার্থে ধর্মের নামে বলি দেওয়া হইছিল। কিন্তু সেদিন ই সেই মহান পুরুষ প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলেন যে আর নয়। বাংলাদেশের নারিদের তিনি এই নৃশংশ প্রথার হাত থেকে বাঁচাবেন।
এবং পরবর্তি কালে তিনি তা করিতে সক্ষম হইয়াছিলেন। সেই প্রবাদ প্রতিম পুরুষ ছিলেন রাজা রামমোহন রায়।
Comments
Appreciate the author by telling what you feel about the post 💓
No comments yet.
Be the first to express what you feel 🥰.
Please Login or Create a free account to comment.