আমার দাদুর কাঁঠাল অতি প্রিয় ছিল। নিজে যেমন ওটি খেতে ভালবাসতেন তেমনি খাওয়াতেও। তাই তিনি নিজের বাড়ির চারকোনে চারটি কাঁঠাল গাছ লাগিয়েছিলেন। এছাড়াও বাড়িতে আম, জাম , নারিকেল, পেয়ারা, সুপুড়ি, কুল প্রভৃতি ফলের গাছ ছিল।কিন্তূ পাকা কাঁঠালের কদরই আলাদা ছিল। জৈষ্ঠ মাসে যখন আম- কাঁঠাল পাকবার সময় হত তখন গন্ধে চতুর দিক মম করে উঠত। মনে পড়ে, এইসময় আমাদের বাড়িতে জামাইষষ্ঠির উৎসব হত। দাদু তিন জামাইকে নিমন্তন্ন করে খাওয়াতেন। দাদু ভিষণ চেষ্টা করতেন যে জামাইদের আম- কাঁঠাল দিয়ে আপ্যায়ন করবেন কিন্তু সেটি সর্বদা সম্ভব হত না। কারণ? চোরোর উপদ্রবে। আজ সে রকমই একটি গল্প শোনাব তোমাদের।
একবার হল কি কাঁঠাল গাছে সবে কাঁঠাল ধরেছে। এদিকে জামাইষষ্ঠিও এসে পড়ল। ঠাকুমা অনেকদিন ধরেই বলে চলেছেন যে একদুটো এঁচোড় পাড়িয়ে দিতে। তাঁর বহুদিন ধরে এচোঁড় খাওয়ার সাধ হয়েছিল। কিন্তু দাদু বধ্যপরিকর। গতবার জামাইষষ্ঠি তে কাঁঠাল খাওয়াতে পারেননী। এবার জামাইকে খাওয়াতেই হইবে।
তাই কাঁঠালগুলো একটু বড় হতেই তিনি শুকনো নারিকেল পাতা দিয়ে কাঁঠালগুলো মুড়িয়ে দিলেন। দুটো কি তিনটে কাঁঠাল ছিল এমনি। একসময় একটি কাঁঠাল, যেটি কিনা মাটির একটু ওপরেই ছিল বড় হয়ে মাটিতে ঠেকে গেল। এবার দাদু কাঁঠাল টাকে বাড়তে দেওয়ার জন্য মাটিতে গর্ত খুড়ে দিলেন। কাঁঠালগুলি এই ভাবে লোকচক্ষুর আড়ালে বড় হতে থাকল। দাদুর যত্ন দেখে আমরা আড়ালে খুব হাসতাম। ঠাকুমা বলতে লাগলেন,
"যতই করো, এ কাঁঠাল তোমরা খেতে পাবে না।" এই নিয়ে দাদুর সাথে তাঁর প্রায়ই ঝগড়া লেগে যেত। দাদু বলতেন "আগে থেকে কেন কুডাক ডাক?"
ক্রমে কাঠাল বাত্তি হল। তাতে পাঁক ধরল। এবং কাঁঠাল পাকলে যা হয়, তাঁর গন্ধও ছড়াল। এবার কাঁঠাল পাড়বার সময় হয়ে এল। এদিকে জামাইষষ্ঠিরও বিশেষ বাকি নেই। দাদু দিনরাত কাঁঠালের পাহারা দিতে লাগলেন। একদিন ঠিক করলেন যে এবার কাঁঠাল পুরো পেকে গেছে। কাল সকালে কাঁঠালগুলি পারা হবে।
ভোররাতের দিকে দাদুর কিভাবে যেন ঘুম লেগে গেছিল। ঘুম ভেঙ্গেই নাক টেনে বললেন," গন্ধ নেই তো।" পড়িমড়ি করে বাগানে গিয়ে দেখলেন যে যা অনুমান করেছিলেন তাই ঠিক। কাঁঠালগুলি সব উধাও।
পর- পর কয়েকবছর একই গল্প। যেই না কাঁঠাল পাঁকার সময় হয়, চোরে এসে কাঁঠাল চুরি করে পালায়।
এরপড় ছোটপিসির বিয়ের সময় দাদু রাগ করে তাঁর সাধের কাঁঠাল গাছগুলি কাটিয়ে দিলেন। মনে সেদিন তাঁর এত দুঃখ হয়েছিল যে তিন দিন তিনি ঘর থেকে বাহির হন নাই।
Comments
Appreciate the author by telling what you feel about the post 💓
No comments yet.
Be the first to express what you feel 🥰.
Please Login or Create a free account to comment.