ভুল করে
প্রতিমা দেবী সেসময় মাথা ঝুঁকিয়ে কি যেন পড়ছিলেন। হঠাৎ খুট করে একটা শব্দ হতেই মুখ তুলে যখন চাইলেন তখন দেখতে পেলেন যে তাঁর শ্বশুরমশাই সান্ধ্য ভ্রমণ সেরে ঘরে ফিরলেন। উনি তারাতারি বাবামশাই এর পা ধোয়ার জল আর খড়ম খানা এনে দিলেন।
একটু মুচকি হেসে ওঁর শশুরমশাই এরপর তাঁকে "থ্যেংকয়ু " বলে নিজের ঘরে চলে এলেন। সেই যে উনি ঘরে ঢুকলেন রাতে আর বেড়লেন না। রাতের খাবার খেতেও নিচে খাবার ঘরে এলেন না।
পচার মাকে এরপর প্রতিমা দেবী তাঁকে ডাকতে পাঠালেন।কিন্তু সেও ওনার কোনো সাড়া না পেয়ে সেদিন ফিরে এসেছিল।
সারা রাত প্রতিমা দেবীর বড় দুশ্চিন্তায় কাটাল। বারণ না থাকলে উনি নিজেই যেতেন। গিয়ে দেখে আসতেন যে ব্যপারখানা কী? কিন্তূ এখন তো উনি অপারগ।
সারারাত উসখুশ করার পড় প্রতিমা দেবী আর থাকতে না পেরে ভোর হতেই ছুটলেন বাবামশাইএর ঘরে। সাড়ারাত অভুক্ত শ্বশুরমশাই কে কিছু খেয়ে নেওয়ার অনুরোধ করতে। কিন্তু ওঁর ঘরে ঢুকে প্রতিমাদেবী একদম বোকা বনে গেলেন। ঘরে তো কেও নেই! বিছানা, ওনার সাধের আরামকেদারা, সব খালি!! কেবল বাবামশাইয়ের হাতের ছড়ি টা বিছানার ওপর রাখা আছে!
তবে এত সাতসকালে বাবামশাই কোথায় গেলেন?? ওঁর সাধের ছড়ি ছাড়া তো আজকাল কোথাও তেমন যান না! তাহলে??
প্রতিমাদেবী প্রাতঃরাশের থালা হাতে নিয়ে ফিরে আসছিলেন। কিন্তু চমকাবার এখোনো কিছু বাকি ছিল, তাঁর! হঠাৎ দেখলেন দরজার কোনে বাবামশাই দাড়িয়ে আছেন চুপচাপ, এবং কি যেন ভেবে চলেছেন। পরনে তাঁর তখোনো গত সন্ধ্যার ভ্রমণ পোষাক ছিল!!
পরে ক্রমে সকলেই জানলেন যে কাল সন্ধায় বাবামশায় বাড়ি ফিরে ভুল করে নিজের সাধের লাঠিটিকে বিছানায় রেখে সারারাত নিজে দরজার পিছনে দাড়িয়ে ছিলেন!!
গল্প কিংবা কবিতার প্লট বাঁধার সময় ভুল করে এমন অনেক কান্ড যে তিনি ঘটাতেন, তা প্রতিমাদেবী বিলক্ষন জানতেন।
পাঠক/ পাঠিকাদের নিশ্চয় বলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই যে এই বাবামশাই হলেন বিশ্বকবি আমাদের অতি প্রিয় রবীন্দ্রনাথ আর ওঁর পুত্রবধু হলেন প্রতিমা দেবী।
Comments
Appreciate the author by telling what you feel about the post 💓
No comments yet.
Be the first to express what you feel 🥰.
Please Login or Create a free account to comment.