ব্লক

ভালোবাসায় আগলে ধরে, হিমেল পরশে খন্ড হয়ে যাওয়া অন্তরটা পুনরায় জোড়া লাগিয়েছিল তো ফাতিহার রব্ব!

Originally published in bn
Reactions 1
426
Jaynab Sultana
Jaynab Sultana 18 Feb, 2022 | 1 min read

ভাইব্রেট করা ফোনটা হাতে নিয়ে কৌতূহল দৃষ্টিতে সাদা স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে ফাতিহা!

এত বছর পরে নাফির মেসেজ দেখে বুকটা ধক করে ওঠে তার৷

 

যে ঝড় দুই বছর আগে মনের আঙিনায় উত্তাল ঢেউ সৃষ্টি করেছিল, সেই একই ঝড় যেন হুট করেই হানা দিয়ে বসে আবার।

নাফি লিখেছে সে তার সমস্ত কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত। সরাসরি না বললেও, খুব গোপনে বুঝাতে চেয়েছে, সে আবার ফাতিহার জীবনে ফিরে আসতে চায়। এটা কি সম্ভব?

মোবাইলের সুইচ অফ বাটন ক্লিক করে, মোবাইলটা খাটের এক পাশে ফেলে দেয় ফাতিহা।

চোখ দুটি লাল হয়ে আছে! ফ্লোরে হাটু গেড়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে সে!

 

হঠাৎ করেই, একসাথে কাটানো সেই সুন্দর (!) মুহুর্ত গুলো যেন চোখের সামনে বিরাজ করছে৷ কত কেয়ারিং ছিল ছেলেটা! সারাদিন ফাতিহার খোঁজ নিতো, একটু অসুস্থ হলেই ভোঁ দৌড় দিয়ে চলে আসতো৷

মনে ঢেউ খেলানো সেই ছেলেটাই আবার এসেছে।

কি করবে ফাতিহা?

 

রাত যত গভীর হচ্ছে, কান্নার শব্দ তত তীব্র হচ্ছে৷ যন্ত্রণা গুলো পাখা মেলে, পুরো ঘরে পৈশাচিক হাসি দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে৷ উফ! কী ভয়ংকর!

হৃদয়ের রক্তক্ষরণ যেন দ্বিগুণ হারে বেড়েই চলছে৷

 

দিশেহারা ফাতিহা মোবাইলটা আবার অন করে।

মেসেজ অপশনে যেয়ে নাফির মেসেজটা আবার দেখে৷

কী আশ্চর্য! নাফির বলা শব্দ গুলোর মাঝে অদ্ভুত মায়া জড়িয়ে আছে। যেই মায়ার বেড়াজালে ফাতিহা আটকা পড়ে যাচ্ছে। চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে৷ কী করবে এখন ফাতিহা? মেসেজের রিপ্লাই দিবে? রিপ্লাই দিয়ে বলবে তাকে ছাড়া সে বাঁচতে পারবে না?

 

বাঁচতে পারবেনা কথাটা মাথায় আসতেই, ফাতিহার অন্তরটা জ্বলে উঠে! কী বলছে ও এসব! বাঁচতে পারবে না মানে! এই দুই বছর কিভাবে বেঁচে ছিলো তাহলে? মনের আঙিনায় আছড়ে পড়া উত্তাল ঢেউ যেন কিছুক্ষণের জন্য শান্ত হয়ে যায়। ফাতিহার মনে পড়ে যায়, আজ থেকে ঠিক দুইবছর আগে যখন নাফি তার সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে দিয়েছিল, সেদিনও ঠিক আজকের মতোই কষ্ট হচ্ছিলো। শ্বাস যেনো আটকে আসছিলো সেদিন! ফাতিহার মনে হচ্ছিলো কেউ যেন তার হৃদপিন্ডটির ঠিক মাঝখানে ধারালো ছুরি দিয়ে কেটে দিয়েছে। কই? সেই অসহ্য যন্ত্রণার সময় তো নাফি ছিল না!

 

ভালোবাসায় আগলে ধরে, হিমেল পরশে খন্ড হয়ে যাওয়া অন্তরটা পুনরায় জোড়া লাগিয়েছিল তো ফাতিহার রব্ব! নিস্তব্ধ, নিসঙ্গ, গহীন অন্ধকার রাতে তো কেউ ফাতিহার যন্ত্রণা গুলো, চাপা কান্নার শব্দ গুলো শুনেনি! যে মানুষটাকে মায়ার বাধণে আগলে রেখে, হৃদয়টাকে উজাড় করে সব টুকু ভালোবাসা দিয়েছিল, সেই নাফি তো তাকে একা, বদ্ধ ঘরে রেখে চলে গিয়েছিল। কিন্তু জন্ম থেকেই যার ভালোবাসা সবসময় উপেক্ষা করে গিয়েছে, ফাতিহার একলা সময়ে সেই মহান রব্বই তো তাকে ঝরে যেতে দেয়নি! অদৃশ্য শক্ত বাঁধনে ধরে রেখে, হিদায়াতের আলো জ্বালিয়ে দিয়েছিল তার অন্তরে!

অথচ আজ কয়েক মিনিটের ব্যবধানে, অমূল্য সেই সম্পদ, হিদায়তের আলো এক নিমিষেই নিভে গেলো?!

ফাতিহা অবাক হয়ে নিজেকে ধিক্কার দিতে থাকে! কার জন্য সে কাঁদছে? চোখের পানি গুলো কি এতই সস্তা? যেই সম্পর্কের কোনো মানেই নেই, যে সম্পর্ক নিছক খেল তামাশা ছাড়া আর কিছুই না, যেই মায়া মিথ্যা, যে ভালোবাসার কোনো নামই নেই, যে ভালোবাসায় প্রশান্তি পাওয়া তো দূরের কথা, জাহান্নামের টগবগ করা আগুন হয়ে ধরা দিবে, সে ভালোবাসা, ভালোবাসা হয় কি করে!!

 

চোখ মুছে ফাতিহা উঠে দাঁড়ায়। নিজের পাপের জন্য তো কোনো দিন এভাবে কাঁদেনি সে!

মোবাইলটা হাতে নিয়ে, নাফির কন্টাক্ট নাম্বারে যায় সে৷ সাত-পাঁচ না ভেবেই, ব্লক অপশনে ক্লিক করে নাফির নাম্বার ব্লক করে দেয় ফাতিহা।

ওযু করে জায়নামাজ বিছিয়ে, ছোট্ট বাচ্চার মতো হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে সে।

ফাতিহা জানে, যে রব্ব নাফির নাম্বার তার মোবাইল থেকে ব্লক করার শক্তি দিয়েছেন, সেই রব্ব-ই তাকে অন্তর থেকেও নাফি নামের কালো অধ্যায় চিরতরে ব্লক করার ক্ষমতা দিবেন।

আর তিনিই তো আল কহ্হার! The Ever Dominating!

তাঁর সমস্ত ক্রিয়েশন তাঁর সামনে মাথা নত কর‍তে বাধ্য।

 

 

 

 

0 likes

Published By

Jaynab Sultana

jaynabsultana

Comments

Appreciate the author by telling what you feel about the post 💓

Please Login or Create a free account to comment.